ঢাকা ০৮:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গরমের সমস্যা ও সমাধান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৮:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১
  • ১২৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিছুদিন ধরে দেশে প্রচুর গরম পড়তে শুরু করেছে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি থাকে বা কখনো কখনো এর উপরেও চলে যায়। এত বেশি তাপমাত্রা আমাদের শরীরে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সমস্যা হলো- ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা এবং হিট স্ট্রোক। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মো. বিল্লাল হোসেন-

ডিহাইড্রেশন কী
পরিবেশের তাপমাত্রা বেশি হওয়ার ফলে দেহ থেকে প্রয়োজনীয় পানি বের হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ডিহাইড্রেশন বলা হয়। ডিহাইড্রেশনের ফলে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় মিনারেল সমূহের ঘাটতি দেখা দেয়। ডিহাইড্রেশন তাপমাত্রাজনিত মারাত্মক একটি সমস্যা। পানিশূন্যতার ফলে আমাদের ডায়রিয়া, বমি এবং জ্বর হতে পারে; যা অনেক সময় খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশুরা ও যাদের বয়স ৬০ বছর কিংবা তার কাছাকাছি, এ ধরনের লোকই পানিশূন্যতায় বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।

ডিহাইড্রেশনের কারণ
স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের দেহ থেকে ঘাম, কান্না, শ্বাস-প্রশ্বাস, মূত্র ও পায়খানার মাধ্যমে পানি নিঃসরিত হয়। একজন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির ক্ষেত্রে পানিশূন্যতা পূরণ হয় বিভিন্ন ধরনের তরল পান ও খাবারের মাধ্যমে। কিন্তু যখন কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে যান বিশেষ করে যাদের জ্বর, ডায়রিয়া কিংবা বমি হয়; তাদের ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশন ঘটে। এছাড়াও এটি অতিরিক্ত তাপমাত্রা যুক্ত স্থানে থাকার কারণে বা রোদে থাকার কারণে হয়ে থাকে। এটি মূলত ঘটে তখনই; যখন আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় মিনারেল যেমন- সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি দেহ থেকে বের হয়ে যায়। এছাড়াও ডিহাইড্রেশন হয়ে থাকে অনেক সময় ডাইইউরেটিক্স জাতীয় ওষুধ সেবনের কারণে। কেননা এ জাতীয় ওষুধগুলো দেহ থেকে তরল এবং ইলেকট্রোলাইটসমূহ শোষণ করে থাকে। ফলে সহজেই ডিহাইড্রেশন হয়ে যায়।

লক্ষণসমূহ
ডিহাইড্রেশনের অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
• অতিরিক্ত তৃষ্ণা পাওয়া
• মূত্র নিঃসরণ কমে যাওয়া
• ত্বক শুকিয়ে যাওয়া
• মাথা ব্যথা করা
• অবসাদ
• মাথা ঘোরা
• কোনো কাজ করতে গেলে সন্দেহে ভোগা
• মুখ ও মিউকাস মেমব্রেন শুকিয়ে যাওয়া
• হৃদস্পন্দন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যাওয়া।

তবে শিশুদের ক্ষেত্রে আরও কিছু অতিরিক্ত লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যেমন-
• মুখ এবং গলা শুকিয়ে যাওয়া
• কান্নার সময় চোখ দিয়ে পানি বের না হওয়া
• অনেকক্ষণ ধরে ডায়াপার ভিজে না যাওয়া
• উদাসীনতা
• বিরক্তিভাব ইত্যাদি।

ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের উপায়
কিছু পূর্ব সতর্কতা ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে দারুণ ভূমিকা পালন করে। সেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো-
• প্রচুর পানি পান করুন। বিশেষ করে যখন প্রচুর রোদে থাকেন অথবা কাজের মধ্যে থাকেন।
• দেহ থেকে যে পরিমাণে তরল বের হয়ে যাচ্ছে, অবশ্যই তার থেকে বেশি পানি পান করুন এবং তরল খাবার খান।
• বাইরে যেসব কাজ থাকে, সেগুলো দিনের ঠান্ডা সময় বা তুলনামূলক কম তাপমাত্রার সময় করার চেষ্টা করুন।
• আপনি চাইলে সকালে এবং বিকেলে দিনের কাজগুলো শেষ করতে পারেন।
• দেহে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করতে বিভিন্ন ধরনের তরল, যেমন- ডাবের পানি কিংবা স্যালাইন পান করুন।
• শিশুদের জন্য পেডিওলাইট নামক একধরনের তরল পাওয়া যায়, সেগুলো তাদের পান করানোর চেষ্টা করুন।
• কখনোই বাড়িতে পানীয় কিংবা লবণের দ্রবণ তৈরি করে পান করানোর চেষ্টা করবেন না।

এসব নিয়ম মেনে চললে এই রমজানেও আপনি থাকবেন সুস্থ-সবল এবং ডিহাইড্রেশনমুক্ত। তাই আসুন প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে একটু সচেতন হই। প্রচুর পানি পান করি। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

গরমের সমস্যা ও সমাধান

আপডেট টাইম : ১১:১৮:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিছুদিন ধরে দেশে প্রচুর গরম পড়তে শুরু করেছে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি থাকে বা কখনো কখনো এর উপরেও চলে যায়। এত বেশি তাপমাত্রা আমাদের শরীরে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সমস্যা হলো- ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা এবং হিট স্ট্রোক। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মো. বিল্লাল হোসেন-

ডিহাইড্রেশন কী
পরিবেশের তাপমাত্রা বেশি হওয়ার ফলে দেহ থেকে প্রয়োজনীয় পানি বের হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ডিহাইড্রেশন বলা হয়। ডিহাইড্রেশনের ফলে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় মিনারেল সমূহের ঘাটতি দেখা দেয়। ডিহাইড্রেশন তাপমাত্রাজনিত মারাত্মক একটি সমস্যা। পানিশূন্যতার ফলে আমাদের ডায়রিয়া, বমি এবং জ্বর হতে পারে; যা অনেক সময় খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশুরা ও যাদের বয়স ৬০ বছর কিংবা তার কাছাকাছি, এ ধরনের লোকই পানিশূন্যতায় বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।

ডিহাইড্রেশনের কারণ
স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের দেহ থেকে ঘাম, কান্না, শ্বাস-প্রশ্বাস, মূত্র ও পায়খানার মাধ্যমে পানি নিঃসরিত হয়। একজন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির ক্ষেত্রে পানিশূন্যতা পূরণ হয় বিভিন্ন ধরনের তরল পান ও খাবারের মাধ্যমে। কিন্তু যখন কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে যান বিশেষ করে যাদের জ্বর, ডায়রিয়া কিংবা বমি হয়; তাদের ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশন ঘটে। এছাড়াও এটি অতিরিক্ত তাপমাত্রা যুক্ত স্থানে থাকার কারণে বা রোদে থাকার কারণে হয়ে থাকে। এটি মূলত ঘটে তখনই; যখন আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় মিনারেল যেমন- সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি দেহ থেকে বের হয়ে যায়। এছাড়াও ডিহাইড্রেশন হয়ে থাকে অনেক সময় ডাইইউরেটিক্স জাতীয় ওষুধ সেবনের কারণে। কেননা এ জাতীয় ওষুধগুলো দেহ থেকে তরল এবং ইলেকট্রোলাইটসমূহ শোষণ করে থাকে। ফলে সহজেই ডিহাইড্রেশন হয়ে যায়।

লক্ষণসমূহ
ডিহাইড্রেশনের অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
• অতিরিক্ত তৃষ্ণা পাওয়া
• মূত্র নিঃসরণ কমে যাওয়া
• ত্বক শুকিয়ে যাওয়া
• মাথা ব্যথা করা
• অবসাদ
• মাথা ঘোরা
• কোনো কাজ করতে গেলে সন্দেহে ভোগা
• মুখ ও মিউকাস মেমব্রেন শুকিয়ে যাওয়া
• হৃদস্পন্দন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যাওয়া।

তবে শিশুদের ক্ষেত্রে আরও কিছু অতিরিক্ত লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যেমন-
• মুখ এবং গলা শুকিয়ে যাওয়া
• কান্নার সময় চোখ দিয়ে পানি বের না হওয়া
• অনেকক্ষণ ধরে ডায়াপার ভিজে না যাওয়া
• উদাসীনতা
• বিরক্তিভাব ইত্যাদি।

ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের উপায়
কিছু পূর্ব সতর্কতা ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে দারুণ ভূমিকা পালন করে। সেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো-
• প্রচুর পানি পান করুন। বিশেষ করে যখন প্রচুর রোদে থাকেন অথবা কাজের মধ্যে থাকেন।
• দেহ থেকে যে পরিমাণে তরল বের হয়ে যাচ্ছে, অবশ্যই তার থেকে বেশি পানি পান করুন এবং তরল খাবার খান।
• বাইরে যেসব কাজ থাকে, সেগুলো দিনের ঠান্ডা সময় বা তুলনামূলক কম তাপমাত্রার সময় করার চেষ্টা করুন।
• আপনি চাইলে সকালে এবং বিকেলে দিনের কাজগুলো শেষ করতে পারেন।
• দেহে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করতে বিভিন্ন ধরনের তরল, যেমন- ডাবের পানি কিংবা স্যালাইন পান করুন।
• শিশুদের জন্য পেডিওলাইট নামক একধরনের তরল পাওয়া যায়, সেগুলো তাদের পান করানোর চেষ্টা করুন।
• কখনোই বাড়িতে পানীয় কিংবা লবণের দ্রবণ তৈরি করে পান করানোর চেষ্টা করবেন না।

এসব নিয়ম মেনে চললে এই রমজানেও আপনি থাকবেন সুস্থ-সবল এবং ডিহাইড্রেশনমুক্ত। তাই আসুন প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে একটু সচেতন হই। প্রচুর পানি পান করি। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করি।